একচেটিয়া বাজারের সংজ্ঞা :
যে বাজারে একজন মাত্র বিক্রেতা বা একটি মাত্র প্রতিষ্ঠান অসংখ্য ক্রেতাদের কাছে একটি দ্রব্য বিক্রি করে এবংদ্রব্যটির কোনো ঘনিষ্ঠ পরিবর্ত দ্রব্য থাকে না, সেই বাজারকে একচেটিয়া বাজার বলে।
গ্রিক ভাষায় Mono শব্দের অর্থ এক এবং Poly শব্দের অর্থ বিক্রেতা। অর্থাৎ প্রতিযোগিতা ছাড়া একজন বিক্রেতা-নির্ভর বাজারই হল একচেটিয়া বাজার। যেমন, বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থা একচেটিয়া বাজারের উদাহরণ।
একচেটিয়া বাজারের বৈশিষ্ট্য :
একচেটিয়া বাজারের সংজ্ঞা থেকেই একচেটিয়া বাজারের বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায়। একচেটিয়া বাজারের বৈশিষ্ট্য গুলো আলোচনা করা হচ্ছে :
(1) চাহিদা রেখা ঋণাত্মক ঢাল হয় :
এই বাজারে দাম বাড়লে চাহিদা কমে এবং দাম কমলে চাহিদা বাড়ে।
(2) একজন মাত্র বিক্রেতা বা একটি মাত্র ফার্ম :
একচেটিয়া বাজারে একজনমাত্র বিক্রেতা বা একটি মাত্র ফার্ম থাকে, যে দ্রব্যটি উৎপাদন করে এবং বাজারে জোগান দেয়। ফলে দ্রব্যটির উৎপাদন ও জোগানের উপরফার্মটির সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকে।
(3) ঘনিষ্ঠ পরিবর্ত দ্রব্যের অভাব :
একচেটিয়া ফার্মটি যে দ্রব্যের উৎপাদন ও জোগান দেয় তার কোনো ঘনিষ্ঠ পরিবর্ত দ্রব্য থাকে না। ফলে ক্রেতাদের পক্ষে ওই দ্রব্যের পরিবর্তে অন্য দ্রব্য কেনা সম্ভব হয় না।
(4) শিল্পে প্রবেশের বাধা :
একচেটিয়া বাজারে কোনো নতুন ফার্ম প্রবেশ করতে পারে না। যদি নতুন ফার্ম বাজারে প্রবেশ করে, তাহলে একচেটিয়ার অস্তিত্ব থাকে না।
(5) ফার্ম ও শিল্পের মধ্যে পার্থক্য অনুপস্থিত :
একচেটিয়া বাজারে ফার্ম ও শিল্পের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। কারণ, একচেটিয়া বাজারে একটি মাত্র ফার্ম বা বিক্রেতা শিল্পের সমগ্র জোগান নিয়ন্ত্রণ করে।
(6) প্রতিযোগিতা অনুপস্থিত :
একচেটিয়া বাজারে যেহেতু একটিমাত্র ফার্ম বা একটিমাত্র বিক্রেতা থাকে এবং দ্রব্যটির কোনো ঘনিষ্ঠ পরিবর্ত দ্রব্য থাকে না, সেইজন্য এই বাজারে প্রতিযোগিতার কোনো সুযোগ নেই। ফলে এই বাজারে প্রতিযোগিতামূলক বিজ্ঞাপনের কোনো প্রয়োজন হয় না।
(7) দাম নির্ধারক :
একচেটিয়া বাজারে ফার্মটি দ্রব্যের উৎপাদন ও জোগান সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে বলে দ্রব্যটির দামের উপর একচেটিয়া ফার্মের নিয়ন্ত্রণ থাকে। একচেটিয়া ফার্মটি নিজের প্রয়োজন মতো। দ্রব্যটির দামের পরিবর্তন করতে পারে বলে একচেটিয়া ফার্মটি হল দাম নির্ধারক (Price Maker)।
একচেটিয়া বাজারের উদ্ভবের কারণ বা একচেটিয়া বাজারের অস্তিত্বের কারণ (Reasons for the origin) :
বাজারের উদ্ভব নানা কারণে হতে পারে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কারণগুলি নীচে আলোচনা করা হল।
(1) সরকারি আইন (Government Law) :
সরকার অনেক সময় কোনো উৎপাদন প্রতিষ্ঠান বা ফার্মকে বিশেষ আইনের মাধ্যমে দ্রব্য উৎপাদন ও বণ্টনের অধিকার দিয়ে অন্য ফার্মের প্রবেশ আইনগতভাবে নিষিদ্ধ করতে পারে। ফলে একচেটিয়া বাজারের উদ্ভব হতে পারে।
(2) পেটেন্ট অধিকার (Patent Right) :
অনেক সময় একটি ফার্ম নতুন কোনো দ্রব্য বা নতুন কোনো উৎপাদন পদ্ধতির উদ্ভাবন করে পেটেন্ট অধিকার পেতে পারে। কোনো একটি ফার্ম পেটেন্ট অধিকার অর্জন করলে অপর কোনো ফার্ম ওই দ্রব্য উৎপাদন করতে পারে না বা ওই উৎপাদন পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারে না বলে একচেটিয়া বাজারের উদ্ভব হতে পারে।
(3) কাঁচামালের মালিকানা (Ownership of Raw Materials) :
অনেক সময় কোনো দ্রব্য উৎপাদনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামালের মোট জোগানের সম্পূর্ণটি যদি একটি মাত্র ফার্মের মালিকানায় থাকে এবং ওই বিশেষ ফার্মটি অন্য কোনো ফার্মের কাছে যদি ওই কাঁচামাল বিক্রি না করে তাহলে ওই বিশেষ ফার্মটি ছাড়া অন্য কোনো ফার্ম দ্রব্যটি উৎপাদন করতে পারবে না। ফলে ওই দ্রব্যটির বাজারে একচেটিয়ার উদ্ভব হয়। এই ধরনের একচেটিয়ার বাজারকে বলা হয় স্বাভাবিক একচেটিয়া (Natural Monopoly ) ।
(4) অসম প্রতিযোগিতা (Uneven Competition) :
অনেক সময় বাজারের ছোটো ছোটো ফার্মগুলি একটি বড়ো ও শক্তিশালী ফার্মের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে বাজার থেকে চলে যেতে বাধ্য হয়। এই অবস্থায় বড় ও শক্তিশালী ফার্মটি বাজারে টিকে থেকে একাই সমগ্র বাজার দখল করে নেয়। এইভাবে অসম প্রতিযোগিতা থেকে একচেটিয়ার উদ্ভব হতে পারে।।
(5) জোট গঠন (Cartel Formation) :
অনেক সময় কয়েকটি ফার্ম প্রতিযোগিতা না করে নিজেদের স্বার্থে জোটবদ্ধ হয়ে একচেটিয়া বাজার সৃষ্টি করতে পারে।
(6) বাজারের সংকীর্ণতা (Limited Market) :
যদি কোনো প্রব্যের বাজারের আয়তন খুব ছোটো হয়। তাহলে নতুন কোনো ফার্ম বাজারে প্রবেশ করার আগ্রহ দেখায় না। ফলে ওই বাজারে একচেটিয়ার অস্তিত্ব বজায় থাকতে পারে।
Great web site! It looks very expert! Sustain the good job!
thanks